// এ্যাপল টিউন //
![]() |
পানি মারাই যেন প্রেম নিবেদন প্রতিবছরেই চিৎমরমে সাংগ্রাই উৎসবের পানিখেলা উত্যাপন হয় |
রাঙামাটির কাপ্তাই থেকে নৌকায় করে যেতে হয় চিৎমরমে। ঘাট বেয়ে উঠতেই গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগে চিৎমরমে আসা তরুণ-তরুণী, শিশু-বৃদ্ধদের। শহর থেকে দূরের এই চিৎমরমের পানিখেলায় প্রেম হয় অনেকের। প্রেম হয়েছিল উইং পাই মার্মা, লিসাই কিউ মার্মা, চেনাং পি মার্মার মতো বৃদ্ধাদের। আবার তরুণ জ্যাকসন, লিই পিংই বা তরুণী সিউং লি-এর প্রেমও চিৎমরমে। প্রতিবছরেই চিৎমরমে সাংগ্রাই উৎসবের পানিখেলা দেখতে আসেন পাই মার্মা, লিসাই কিউ মার্মা, চেনাং পি মার্মা।
প্রায় ৪০ বছর আগে এই চিৎমরমে লিসাই কিউ মার্মাকে লক্ষ করে পানিখেলায় পানি ছুড়েছিলেন তার স্বামী সিয়ং উই প্রু। তাই মারমাদের নববর্ষ উৎসব ‘সাংগ্রাই’ দেখতে প্রতিবছরই চিৎমরমের বৌদ্ধবিহারের সামনের মাঠে আসেন বিভিন্ন বয়সের মার্মা প্রেমিক-প্রেমিকেরা।
টানানো সামিয়ানার নিচে বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা দুভাগে ভাগ হয়ে পানি নিক্ষেপ করছিল এক দল আরেক দলকে। আবার বাঁশি বাজানো শেষ হলেই বন্ধ হয়ে যায় পানি নিক্ষেপ। তবে এক সময় এত আনুষ্ঠানকিতা ছিল না বলে জানান বৃদ্ধারা। কয়েক বছর আগেও লেকের পাড়ে জমতো পানিখেলা। একদল পানি উঠাতো আরেক দল ছুড়তো।
বৃদ্ধা চেনাং পি বলেন, “আগে পানি উৎসবে পছন্দের মেয়েদের পানি ছুড়তো ছেলেরা। আবার মেয়েরাও পিছিয়ে থাকতো না। কোনো ছেলেকে ভালো লাগলে তারাও পানি ছুড়তো। খেলা শেষে অনেক সময় ভালোবাসা হয়ে যেত।” রিড্রং থেইয়ের সঙ্গে এভাবেই প্রেম, তারপর বিয়ে হয়েছিল চেনাংয়ের। বললেন, চেনাং বড় ভালো লোক ছিল। মারা গেছেন বছর দশেক হলো। কখনো খারাপ ব্যবহার করেননি তার সঙ্গে।
আরেক বৃদ্ধা উংই পাই বললেন, “আগে আমরা সবসময় খাদির তৈরি মারমা থামি আর জামা পরতাম। উৎসবের পোশাকই ছিল এটি। এখন মেয়েরা আর ওই পোশাক পরে না। আবার পরলেও থামি’র বদলে পরে লুঙ্গি। উৎসবের সবার পরনে বিদেশি জামা কাপড়। জিন্স প্যান্ট আর গেঞ্জি।
চিন্পুরা যখন ছোট ছিল, তখন সাংগ্রাইতে ২ থেকে ৩ টাকা পেত। এখনকার ছেলেমেয়েরা পায় শত শত টাকা। তবে তখন টাকারও অনেক দাম ছিল। সে সময় মাছ, মাংস আর ফসল দিয়েই বেশি ব্যবসা হতো এখানে।” ৫ বছর আগে এ জল উৎসবেই প্রেম হয়েছিল জ্যাকসন আর সিউং লি-এর। সিউং লিকে আগে থেকে চিনলেও কোনোদিন প্রেমের কথা বলতে পারেনি জ্যাকসন। ২০০৮ সালে প্রেম নিবেদনের জন্য সিউং লিকেই পানি নিক্ষেপ করে সে।
সাংগ্রাইতে নিজের বাড়িতে কোনো পিঠা বানায় না মারমারা। দোকান থেকেই সব কিনে আনেন। রোববার সকালে দোকান থেকে বিস্কুট, কলা, মিঠাই, মিষ্টি আর জিলাপি কিনে আনে। এ দুদিন যারা বেড়াতে আসবেন, তাদের সেগুলো দিয়েই আপ্যায়ন করা হবে। আর দেশি মদ তো রয়েছেই।
মারমা মেয়েরা রূপার অলঙ্কার বেশি পছন্দ করে। বিয়ের সময়, সিউং লিংকে রূপার বাহুবন্ধনী, মালা, নথ, চুড়ি দিয়েছিল তার স্বামী। বিয়ের পরের সাংগ্রাইগুলোতে এগুলো পরে আসত সে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চিৎমরম ঘাটে আসছেন মারমারা। তারা মেলায় ঘুরে দেখছেন। শহরের সব জিনিসই রয়েছে মেলায়। রিং ছুড়ে জুয়া খেলা, আর লাকি কুপনের ড্রয়ের স্টলেই ভিড় বেশি। বিরক্ত হন বৃদ্ধারা।